ফটিকছড়ির বর্ষিয়ান সাংবাদিক আবুল কাসেম আর নেই: বিভিন্ন মহলের শোক
মোঃ আলমগীর হোসেন , চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান #
দৈনিক সংবাদের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ও দৈনিক ইনকিলাবের সাবেক অর্থনৈতিক সম্পাদক, প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কাসেম ৫ নভে¤^র সোমবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। পাঁচ ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি ভাই-বোন, আত্মীয়-শ্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার সমবয়সী বন্ধু বর্ষিয়ান সাংবাদিক এবিএম মুছাকে একটু দেখার শেষ ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, দেশের কৃতিসন্তান আবুল কাসেম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলাধীন সমিতিরহাট ইউপির নিশ্চিন্তাপুর গ্রামের চিকন তালুকদার বাড়ীর মরহুম আমিনুল রহমানের বড়পুত্র। বৃটিশ আমলে ফটিকছড়ির রোসাংগিরী হাই স্কুল হতে হিন্দু ছাত্রদের পেছনে ফেলে তিনিই প্রথম ‘ফাষ্ট ডিভিশনে’ ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন। এ জন্য মাইজভান্ডার দরবার শরীফের তৎকালীন সাজ্জাদানশীন পীর সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী; প্রকাশ- বাবা ভান্ডারী কেবলা তাকে ডেকে পাঠিয়ে উন্নত লেখা-পড়া চালিয়ে যেতে আর্থিক ভাবে পুরস্কৃত করেছিলেন। চট্টগ্রামের একটি কলেজে ভর্তি হবার পরই বৃটিশ আমলে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজান পত্রিকায় যোগ দিয়ে তিনি সাংবাদিকতা জীবনে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব মাওলানা আকরাম খাঁ প্রকাশিত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় যোগদান করেন। মাওলানা আকরাম খাঁ ও মাওলানা ভাসানী তাকে খুবই স্নেহ করতেন। ‘মুসলিম আওয়ামী লীগ’ থেকে শুধু ‘আওয়ামী লীগে’ পরিণত করার যে কনভেনশন হয়েছিল; সে কনভেনশনে তিনি এবং সাংবাদিক এবিএম মুছাকে শর্তসাপেক্ষে ঢুকানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি ওই সম্মেলনের গোপন সিদ্ধান্ত শর্তানুযায়ী প্রকাশ না করলেও এবিএম মুছা তা প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এ প্রতিবেদকের কাছে এমনটি স্মরণীয় ঘটনা তিনি বলেছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দৈনিক আজাদীর অর্থনৈতিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে মাওলানা এমএ মান্নান দৈনিক ইনকিলাব প্রকাশ করলে তাঁর অনুরোধে দৈনিক ইনকিলাবে যোগদান করেন। ২০০৪ সালের দিকে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে দৈনিক ইনকিলাব থেকে অব্যাহতি নেন। ব্যক্তিগত জীবনে ‘চিরকুমার’ এ বর্ষিয়ান সাংবাদিক নিজের জন্য কিছুই করেননি। তার নিজ এলাকায় বিদ্যুৎ, স্কুল, কাটিরহাট-যোগিরহাট সড়ক ও হালদা নদীর উপর দু’বার ব্রীজ নির্মাণের ব্যবস্থা করেছিলেন। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গসেনানী শহীদ জিয়াউর রহমান অত্যন্ত স্নেহ করতেন এবং প্রয়োজনে ডেকে নিয়ে পরামর্শও নিতেন। বিগত ৭/৮ বছর তিনি প্রায় অসুস্থ হলেও ঢাকায় থাকতেন এবং সচিবালয়ে প্রতিদিনই ছিল তার সরব পদচারণা। প্রধান তথ্য অফিসারের কার্যালয়ে প্রায় অবস্থান করে সময় কাটাতেন। দু’মাস পূর্বে তিনি নিজ বাড়ীতে যাবার পর পায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে আর ঢাকা ফিরতে পারেননি। গত ২৩ অক্টোবর বিকেলে নিজ বাড়ীতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন সকালে তাকে চট্টগ্রামের মির্জারপুলস্থ একুশে হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। বেলা ৪টা থেকে তার মূখের আওয়াজ এবং চোখ দু’টো বন্ধ হয়ে যায়। সে থেকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন এ প্রবীণতম সাংবাদিক। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে স্কেন করালে তার ব্রেন ষ্টোক ধরা পড়ে। অবস্থা গুরুতর দেখে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবশেষে গত সোমবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়জী, আ’লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন চৌধুরী, আ’লীগ নেতা ড.মাহমুদ হাসান, ফখরুল আনোয়ার, মাসিক ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম পোস্ট সম্পাদক-প্রকাশক সৈয়দ তারেকুল আনোয়ার এবং ফটিকছড়ি প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শোক ও সমাবেদনা প্রকাশ করেছেন। ৫ নভেম্ভর সকাল ১১টায় স্থানীয় সমিতিরহাট বাজারস্থ মাঠে নামাজে জানাযা আদায় শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের মাসিক ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম পোস্টের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্কৃকৃতি শ্বরুপ যে ১০জনকে সম্মাননা দেয়া হয়, তন্মধ্যে বরেণ্য সাংবাদিক আবুল কাসেম অন্যতম।