গাজীপুরে র্যাবের অভিযানে দম্পতি সহ চার অপহরণকারী গ্রেফতার: বিদেশী পিস্তল, গুলিভর্তি ম্যাগাজিন সহ এক অপহৃত উদ্ধার
গাজীপুর দর্পণ রিপোর্ট: গাজীপুর মহানগরের ভূরুলিয়া এলাকা থেকে অপহরণের ১৫ দিন পর সোমবার স্থানীয় দিঘীরচালা সিটি মডেল স্কুল ভবণের একটি ফ্ল্যাট হতে হাত-পায়ে শিকল বাধা অবস্থায় অপহৃত রুবেল হোসেন (২৭) কে উদ্ধার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১ এর একটি দল। এসময় ওই ফ্ল্যাট হতে অপরহরণের মূল পরিকল্পনাকারী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব ভুরুলিয়া এলাকার মৃত আবুল হাসেমের ছেলে মোঃ রুমেন হোসেন ওরফে জীবন(২৪), একই এলাকার উত্তর বিলাসপুরের আব্দুর রহমানের ছেলে গাজীপুর জজ কোর্টের মোক্তার মোঃ মাহবুব চৌধুরী (২২), ও তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার ওরফে সামিয়া (২৫) এবং দীঘির চালা এলাকার মৃত দীবেন মন্ডলের মেয়ে সুমি আক্তার(২৫)’কে গ্রেফতার করে। অপহৃত রুবেল হোসেন ভূরুলিয়া এলাকার হাজী মোঃ শামসুল হকের ছেলে। অভিযান কালে জীবনের কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, অপহরনের পরিকল্পনাকারী জীবন, অপহৃত রুবেলের প্রতিবেশী। ৫/৬ মাস পূর্বে অপহৃত রুবেলের জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের টোপ দিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী জীবন, রুবেলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে গাজীপুর জজ কোর্টের মোক্তার মাহবুবের সাথে রুবেলকে পরিচয় করিয়ে দেয়। গত জুন মাসের ২৫ তারিখে মাহবুব ও জীবন, রুবেলকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চলতি মাসের ৫ তারিখ আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে জীবন, রুবেলকে জমি বিক্রির কথা বলে ফোন দেয়। জীবনের কথামত রুবেল জমির কাস্টমারের সাথে দেখা করার জন্য জুলাই মাসের ০১ তারিখে ভাড়া করা মোক্তার মাহবুবের ফ্ল্যাটে যায়। জীবন, মোক্তার মাহবুব, তার কথিত স্ত্রী সামিয়া ও সামিয়ার সহযোগী সুমি এক সাথে রুবেলের সাথে ইফতার করে। ইফতার করার একপর্যায়ে ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত জুস খেয়ে রুবেল অচেতন হয়ে গেলে মোক্তার মাহবুব ও জীবন মিলে রুবেলে হাত-পা বেধে ফেলে। মাহাবুবের কথিত স্ত্রী সামিয়ার মাধ্যমে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। অপহরনকারীরা জানায় অপহৃতকে সীমাস্ত এলাকায় রাখা হয়েছে এবং টাকা না পেলে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে তাকে পাচার করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এসময় রুবেলের বাবা তার ছেলের কন্ঠ শুনতে চাইলে রেকর্ডকৃত কন্ঠ¯^র শুনানো হয়। তখন রুবেলের বাবা হাজী মোঃ শামসুল হক র্যারের কাছে অভিযোগ করলে র্যাব এই ঘটনার দীর্ঘ অনুসন্ধান শুরু করে। অবশেষে সোমবার ভোরে র্যাব-১ এর ডিএডি মোঃ আঃ হামিদ এর নেতৃত্বেএকটি দল বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে অপহৃতকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে।
র্যাব সূত্র আরো জানায় , আটক অবস্থায় অপহৃত রুবেলের সাথে অপহরনকারীরা নির্মম আচরন এবং মারধোর করতো। অপহৃত রুবেল উদ্ধার হওয়ার সময় তার হাত-পায়ে সিগারেট দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার অসংখ্য ক্ষত ছিল। এছাড়াও গত ০৬ দিন পূর্বে শিকলের বাধন খুলে রুবেল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সুমি তা দেখে ফেলে। এরপর থেকে অপহরণকারীরা নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও গত ১৫ জুলাই অপহরণকারীরা তাদের দলের সদস্য সুমির সাথে রুবেলের বিয়ের ভুয়া কাবিন করে ব্ল্যাকমেইলিং এর ব্যবস্থা করে। মানসিক ও শারিরীক নির্যাতনের ফলে অপহৃত রুবেল অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ছিল। গ্রেফতারকৃত সামিয়ার মোবাইল কল লিষ্ট বিশ্লেষন করে জানা যায়, সে বিভিন্ন মানুষের কাছে টাকার বিনিময়ে দেহপসারিনী সরবরাহ করে থাকে।
এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলে র্যাব সূত্র জানিয়েছেন।